'The Cloud Book - write your story' is the virtual journal where people from all corners of this world are invited to write their 'never expressed' thoughts. We should bring all those thoughts to sunlight. They shall be written in this book of clouds.....and they shall live their lives. The Cloud Book - write your story - is the REFUGE where all those 'Never writtens' flock.... because they believe - one day they will surely get their wings to fly along with the clouds
Monday, December 5, 2011
Nepal - A Travelogue by Nafia Farzana
আনন্দভ্রমণ
অনেক পরিকল্পনার পর সিদ্বান্ত হল এবার নেপাল ভ্রমণে যাব। নেপালের ভিসা অন অ্যারাইভাল, নিঃসন্দেহে দারুন।গত কয়েকবার ভারত ভ্রমণের সময় ভিসা অভিজ্ঞতা সুখকর ছিলনা তাই এত আনন্দ। কোথায় যাবো, কতদিন থাকবো মোটামুটি দিনক্ষণ সব সেট হয়ে আছে।হটাৎ খবর এলো যে প্লেনের টিকেট কাটা হয়েছে অনিবার্য কারণ বশতঃ তারা সব শিডিউল বাতিল করেছে এবং টিকেটের টাকাও ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। যে পরিমাণ আনন্দ ছিল তারচেয়ে বেশি বিষণ্ণতায় মনটা ভরে গেলো। আবার নতুন করে পরিকল্পনা । ছুটির তারিখ আর বিমানের তারিখ ব্যাটে বলে মিলছে না ।অবশেষে নির্ধারিত দিনের ৩ দিন পর একটা প্লেনের টিকেট পাওয়া গেল।মনে হল এ যেন প্লেনের টিকেট নয় লটারির টিকেট পেলাম। প্লেন যখন কাঠমুন্ডুর উদ্দেশে ঢাকা বিমান বন্দর ত্যাগ করল মনে হল লটারির টিকেটের শেষ অঙ্কটা মিলে গেলো। মাত্র এক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে নয়টায় পৌঁছে গেলাম কাঠমুন্ডু “ ত্রিভুবন” বিমান বন্দরে।ইমিগ্রেশনের পালা শেষ করে যখন বেরিয়ে এলাম দেখি,আমাদের গাইড দেবেন্দ্র দারিয়ে আছে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে।সম্যকান্তি ,অমায়িক এই ছেলেটি ট্যুর গাইড হিসেবে পার্ট টাইম কাজ করে আর বাকি সময়টা সে একটি কলেজে ট্যুরিজমের উপর শিক্ষকতা করে।
যাত্রা শুরু হল পরদিন সকাল নয়টা থেকে।কাঠমুন্ডু শহরে সয়ম্ভুনাথ মন্দির।পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায় মন্দিরটি যে উপত্যকায় সেই উপত্যকাটি একসময় বিশাল পদ্ম ফুলে পরিপূর্ণ একটি হ্রদ ছিল।মঞ্জুস্রী দেব মনুষ্য সমাজের উন্নতি, তথা শান্তির জন্য এই হ্রদে খাল কেটে এর পানি সরিয়ে দেন যা পরবর্তীতে কাঠমুন্ডু ভ্যালী হিসেবে জন বসতি গড়ে উঠে আর তার তপস্যায় হ্রদের পদ্ম গুলি পরিণত হয় পাহাড় এবং এই সয়ম্ভুনাথ মন্দিরে।তারপর আমরা চলে গেলাম পাটান দরবার স্কোয়ার ।ধারনা করা হয় কিরাট রাজ্যসম্প্রদায় চতুর্থ শতাব্দী তে এই স্থাপনা তৈরি করেন। পাটান দরবার স্কোয়ারের সৃজনশীল কাঠ আর ধাতব ভাস্কর্য্ পৃথিবী বিখ্যাত । সেদিনের মত কাঠমুন্ডু ঘুরে চলে গেলাম কাঠমুন্ডু থেকে চৌদ্দ কিলোমিটার দূর অবস্থিত ভক্তপুর। অষ্টম শতাব্দীতে স্থাপিত এই শহর, মাল্লা রাজসম্প্রদায় দ্বাদশ থেকে আঠারশো শতাব্দীতে প্রভূত উন্নতি স্বাধন করেন এই স্থাপনার । ভক্তপুরের এই রাজবাড়ির, লোকালয় মুগ্ধ করার মত। নেপালীরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পর্য,টনের খাতিরে অত্যন্ত যত্নের সাথে আগলে রেখেছে শতবর্ষ পুরনো এই শহরটিকে।নয়নাভিরাম এর কাঠের কাজ থেকে চোখ ফেরান দায়।ভক্তপুর থেকে রওনা দিয়ে, পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে চলে এলাম একেবারে ৭২০০ ফিট উপর পাহার চুড়ায়, নাগরকোট । চলতি পথে প্রকৃতি তার রূপ পরিবর্তনের নেশায় যেন মেতে উঠেছিল।এখানে মেঘের মাঝে বসত। আমরা যে হোটেলে ছিলাম তাতে একটি ওয়াচ টাওয়ার ছিল, যেখান থেকে হিমালয় দেখা যায়। গল্পে পরেছি, লোকমুখে শুনেছি হিমালয় সূর্যোখদয়ের সাথে সাথে তার রঙ-রূপ বদলায়।এ দৃশ্য না দেখে নাগরকোট থেকে যাওয়াটাই বৃথা। সূর্যোনদয় সকাল পাঁচটায় , তাই রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর পালা সকালের প্রস্তুতি হিসেবে।এখানে রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পরে। সেপ্টেম্বর মাসে আবহাওয়া ঢাকার মত ভেবে গরম কাপড় না নিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। রাতে আমার ছেলের কল্পলোকের হাজারো প্রশ্ন তার বাবার কাছে।শুনেছে পাহাড়ে ইয়েতী থাকে, তাই ইয়েতী কখন আসবে, ইয়েতীর আম্মু আছে কিনা, বাবু ইয়েতীরা স্কুলে যায় কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি । ভোরবেলা মিছিল করে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দাঁড়ালো হোটেলের প্রায় সব লোক, হিমালয় দর্শনের জন্য । দুর্ভাগ্য বৃষ্টি আর মেঘে ঢাকা হিমালয় কোনমতেই লোক সম্মুখে এলেন না।বৃথা নাগরকোট রাত্রি যাপন।বিমর্ষ মনে নাস্তা খেয়ে পরবর্তী গন্তব্যে রওনা দিবো হটাৎ করে তাকিয়ে দেখি জানালার সামনে মেঘের পর্দা সরিয়ে ঝলমল করে তাকিয়ে আছে হিমালয় যেন বিদায় জানাতেই দেখা দিলেন আমাদের। অসাধারন সেই দৃশ্য ভাষায় বর্ণনাতীত। অমনি ঝাঁপিয়ে পরে কিছু ছবি তোলা, দুর্লভ এই মুহূর্তটাকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার জন্য ।
হিমালয়ে স্মৃতি চোখে নিয়ে নাগরকোট কে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু হল চিতোয়ানের উদ্দেশে। বিকেলে পৌঁছে গেলাম জঙ্গল মহলে, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিবেশে। ৯৩২ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে চিতোয়ানের বিস্তৃতি। ছোট্ট পাহাড়ি নদী “নারায়ানী রাপ্তির” পাশে রিসোর্টের ভেতরে একটি কাঠের মাচা, এতে বসেই দেখা যায় হরিণ আর নদীতে ভেসে থাকা ঘড়িয়াল । কোলাহল মুক্ত শান্তির এই আবাসে অনায়াসে ঘন্টা পার করে দেয়া যায় প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য্ে উপভোগ করে ।দেবেন্দ্র এসে জানালো রাতে আমাদের জন্য থারু সম্প্রদায়ের স্বাংস্ক্রিতিক অনুষ্ঠান আছে। রাত আটটায় অদের অডিটোরিয়ামে ঢুকে খুব একটা ভাল লাগল না। গুমোট জায়গা, টিমটিম আলো ,কাঠের বেঞ্চ পাতা একটা জায়গা। অনুষ্ঠান শুরু হল, সহজ সরল ওদের পালাগান, নাচ, আগুনের খেলা আর ময়ূর নৃত্ত দেখে মন ভরে গেলো।রাতে ফেরার পথে শীত শীত আবহাওয়ায় দেখতে পেলাম কিশোর কিশোরীরা নিজেদের বাড়ীর সামনে দল বেধে নাচছে আর গান গাইছে, মনে হল যেন অনুষ্ঠানের রেশ ধরে রাখতেই এই আয়োজন।পরদিন সকালে হাতীর পিঠে বন বিহার। নেপাল গিয়ে চিতোয়ান না গেলে ভ্রমণটা যেন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। জঙ্গলের ভেতর জ্যন্ত হরিন, বানর, ময়ূর আর গণ্ডার দেখে আমার ছেলে উত্তেজনায় অজ্ঞান প্রায়। দুই ঘন্টা বন বিহার শেষে বেলা এগারটায় চিতোয়ান ছেড়ে পোখারার উদ্দেশে রওনা হলাম।পথিমধ্যে মনকামনায় ক্যাবল কার বা রোপওয়েতে খানিকটা সময় কাটালাম।এখানে মনকামনা দেবীর মন্দিরে স্থানীয় লোকেরা আসেন পূজা দিতে।দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাদের মনের কামনা পুরন করেন।
বিকেলে ফেওয়া লেকের পাশে পাহাড়ে ঘেরা পোখারায় পোঁছে গেলাম। মনোরম পরিবেশ আর মনোলোভা আবহাওয়া। ঠিক তেমনি দোকান গুল পর্যমটকদের মন ভুলানো জিনিসের পসরা নিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।সুবিধে হল প্রায় সব কিছুই ক্রয় ক্ষমতার উর্ধে। তাই শপিংয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে দেবেন্দ্র কে জানালাম আকাশে উড়ব মানে পারাগ্লাইডিং করতে চাই আমরা চারজন। বাকীদের চেহারা আতংকিত কিন্তু বাঁধ না মানা এই চারজন ক্ষ্যাপাকে ঠেকানো দায়। ঠিক হল পরদিন সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে উড়ন হবে। যথারীতি আয়োজন করে বৃষ্টি নামল পরদিন সকালে। দেবেন্দ্র আশ্বাস দিল যখনি আকাশে মেঘ কেটে যাবে নিয়ে যাবে ইচ্ছা পুরনে। ইতিমধ্যে মাউনটেন জাদুঘর, ডেভি’স ফল, মহেন্দ্র গুহা দেখা হবে।সব জায়গাতে ঘুরছি, দেখছি কিন্তু মন থেকে মেঘ কাটেনা। ইচ্ছে হচ্ছিল হাত দিয়ে আকাশ থেকে মেঘ গুলোকে সরিয়ে দিই। আশা ছেড়ে দিয়ে যখন যাচ্ছি দুপুরের খাবার খেতে অমনি সূযির্মামা দেখা দিলেন আকাশে। দৌড়ে গেলাম ফ্লাইং ক্লাবে। পরের টুকু ক্ষুদ্র প্রাণের ইতিহাস ।মেসেডনিয়ান পারাগ্লাইডিং পাইলট নানান কায়দায় বুঝিয়ে দিল কেমন করে দৌড়ে পাহাড় চূড়ার শেষ সীমায় পৌঁছে আকাশে পাড়ি জমাতে হবে। অনেক বুঝলাম কিন্তু সহজ কথাটা পালন করা বেশ কঠিন দু’বার না পেরেই বুঝতে পারলাম। তৃতিয়বার কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি নিজেকে আকাশে আবিষ্কার করলাম। মধ্যবিত্ত ক্ষুদ্র এই প্রাণটা হটাৎ পাওয়া স্বাধীনতায় বেসামাল। অলিন্দ আর নিলয় যেন পাল্লা দিয়ে দৌড়াছে । বিশ্বাস হচ্ছে না পাগুলো কি সত্যি সত্যি আকাশে ঝুলে আছে! অনেকক্ষণ আনন্দে আর উত্তেজনায় বাকরুদ্ধ ছিলাম। বিস্ময় ভরা এই চোখে সবই নতুন। পাশে যখন একটা চিল উড়ে গেল নিজেকে তখন মনে হল বিশাল রক পাখির পায়ে ঝোলানো একটি মানুষ । আধ ঘন্টা যেন এক পলকে কেটে গেল। পাইলটের শেখান কায়দায় ফিরে এলাম ধরায়। ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে দেখি আমার ছেলে হাপুশ নয়নে কাঁদছে মা তাকে ফেলে আকাশে চলে গেছে তাই। একে একে আমরা চারজন নেমে এলাম স্বপ্ন মাখা চোখ নিয়ে। পোখারার ঘোরা শেষ করে ফিরে এলাম কাঠমুন্ডুতে, না দেখা দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে দেখার পালা। রাজা বিরেন্দ্রর রাজবাড়ি “নারায়ানহিতি রয়্যাল প্যালেস” তারমাঝে উল্লেখজজ্ঞ। রাজবাড়ীর রাজকীয় অতিথিদের ছবিতে খুঁজে পেলাম আমাদের রাজনৈতিক চেনা মুখগুলো। বাড়ীর একেবারে পেছনে সেই ভয়াবহ জায়গাটি যেখানে পুরো রাজপরিবারের সকল সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে ছিল তাদেরই আত্বজ, ২০০১ সালের পহেলা জুন। চিন্নিত করে রাখা আছে সে জায়গা গুলো। মন টা প্রাসাদের এখানে এসে ভার হয়ে যায়। কিসের নেশায় সেদিন এই ধ্বংসের খেলায় মেতেছিল যুবরাজ আজো তা স্পষ্ট নয়।
কেমন করে চলে গেল এই সাত টা দিন চোখের পলকে।রাত বারোটায় বিমান উড়বে। লবিতে বসে চলে যাবার প্রহর গুনছি দেবেন্দ্র তার আতিথেয়তার শেষ চমকটা দেখাল। সবার জন্য উপহার নিয়ে এসেছে। সিক্ত চোখে বিদায় জানাল। ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে পাড়ি জামালাম গৎবাঁধা প্রতিদিনকার জীবনচক্রে। ধন্যবাদ দেবেন্দ্রকে অসাধারণ একটি ছুটি আমাদের উপহার দেবার জন্য।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
I only understand the pictures!!!!Really missing those days!!!
ReplyDeleteI dont know when those day will come back again?????????????
ReplyDeleteলোভনীয় ঈর্ষনীয় বটে। সাত দিনের গল্প কয়েক পর্বে লিখলে হয়তো পাঠকের ঝক্কিটা একটু কম হোত। লিখনশৈলী সাবলীল ও সুখপাঠ্য। আশা করি ভবিষ্যতে অন্যান্য বিষয়েও স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের এধরণের সুবিন্যস্ত আনাগোনা দেখতে পাবো।
ReplyDelete