'The Cloud Book - write your story' is the virtual journal where people from all corners of this world are invited to write their 'never expressed' thoughts. We should bring all those thoughts to sunlight. They shall be written in this book of clouds.....and they shall live their lives. The Cloud Book - write your story - is the REFUGE where all those 'Never writtens' flock.... because they believe - one day they will surely get their wings to fly along with the clouds
Thursday, February 21, 2013
Aaswan Bhraman Travelogue by Dr. Nafia Farzana
আসওয়ান ভ্রমণ
Pic: 1.Pyramid, 2.felucca in Lake Naser, 3.Sfynx
আসওয়ান, কায়রো থেকে ৮৬৮ কিলোমিটার দূর, মিশরের একেবারে দক্ষিণ সীমান্তে নীল নদের তীরে অবস্থিত একটি শহর। এই শহরটি বিখ্যাত এর গ্রানাইট পাথরের জন্য।প্রাচীন আমলে নীল নদ দিয়ে এই গ্রানাইট পাথর নৌকা করে নিয়ে যাওয়া হতো মিশরের বিভিন্ন শহরে।এমনকি “গিজায়” অবস্থিত পিরামিড গুলোও তৈরি হয়েছে এখানকার গ্রানাইট পাথর দিয়ে।
কায়রো থেকে ট্রেন ,বাস অথবা প্লেন এই তিন ভাবে আসওয়ান যাওয়া যায়। প্লেনে যেতে এক ঘন্টা মত সময় লাগে আর বাস/ট্রেনে যেতে সময় লাগে ১২ ঘন্টা । সময় থাকলে ট্রেন জার্নি আরামপ্রদ এবং সাশ্রয়ী। আমরা সকাল ১০টায় গন্তব্যে পৌঁছে রেল স্টেশনে দাড়িয়ে আছি এবং আমাদের অচেনা গাইডকে খুঁজে বেড়াচ্ছি ভিড়ের মাঝে। হটাৎ একটা অল্প বয়সের ছেলে এসে আমাদের পরিচয় দিল তার নাম “রেমি” এবং এই যাত্রায় সেই আমাদের গাইড এর মহান দায়িত্ব পালন করবে। একাধারে বলে গেল সে ইংলিশ, আরবি, রোমান ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে। আমরা ইংরেজি ভাষাটাকেই ধারা বর্ণনার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলাম।
প্রথমে আমাদের গাইড আমাদের নিয়ে গেল “হাই ড্যাম অফ আসওয়ান” দেখাতে। এটি নীল নদের উপর একটি বাঁধ প্রকল্প যা ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল নাগাদ তৎকালীন মিশরিও প্রেসিডেন্ট “নাসের” তৈরি করেন রাশিয়ার আর্থিক সাহায্য নিয়ে। এই বাঁধের জন্য মিশর বন্যা থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং সাথে সাথে কৃষি এবং বিদ্যুৎ উন্নয়নে বিপুল উন্নতি সাধন করেছে । এই বাঁধের এক পাশে তৈরি হয়েছে মানব নির্মিত অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ “লেক নাসের”। এর এক পাশে সুদান এবং আরেক পাশে মিশর অবস্থিত। সৃষ্টিকর্তা যেন বিশেষ এক নীল রঙ দিয়ে এই জলের রেখা এঁকেছেন। নদী এত নীল হয় এর আগে আমি কখনো দেখিনি। “হাই ড্যাম অফ আসওয়ান” দেখে আমরা রওনা দিলাম “ফিলি আইল্যান্ড” এ “টেম্পল অফ আইসিস” দেখতে। লেক নাসের দিয়ে দু-ভাবে এই দ্বীপে যাবার ব্যবস্থা আছে “ফেলুকা” নামক স্থানীয় এক ধরণের পাল তোলা নৌকা এবং মটর চালিত নৌকা। সাথে আমাদের ৪ জন ক্ষুদে সদস্যদের দুরন্তপনার কথা মাথায় রেখে আমরা মোটর চালিত নৌকাই বেছে নিলাম। এখানে জলের পাশে বাড়ী ও পাড়ের বালুর রঙ হল স্বর্ণাভ হলুদ। এই দুইয়ের মাঝে সাদা ফেলুকা গুলো কে গরবিত রাজহাঁসের মত দেখাচ্ছে। ১৫ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম ফিলি আইল্যান্ড এর “ টেম্পল অফ আইসিস”এ। খ্রিস্টের জন্মের ৬৯০ বছর আগে এই টেম্পলটি তৈরি হয়েছে দেবী আইসিস কে নিবেদন করে। এখানে এসে আমাদের গাইড তার কথার জাদু শুরু করে দিল। আমাদেরকেই রাজা রানি বানিয়ে অসাধারণভাবে মূর্ত করে তুললো হাজার বছরের পুরনো পৌরাণিক কাহিনী কে। গল্প শেষে আধ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিল ছবি তুলতে আর মনের মত করে দ্বীপটাকে উপলব্ধি করতে। বিভিন্ন কায়দায় ছবি তুললাম আমরা সবাই। দৃষ্টি দিয়ে যা উপভোগ্য ছবি তোলার পর দেখলাম প্রকৃতি ঠিক তেমনটা ছবিতে ধরা দেয়না। কিছুটা ক্যামেরায় আর বাকিটা মনের খাতায় লিখে নিয়ে গেলাম। এবার যাবার পালা নদীতে অপেক্ষমান আমাদের “নাইল ক্রুজে”। বিকেলে আমাদের কে “এলিফেন্ট আইল্যান্ড” আর “কিচনার আইল্যান্ড” দেখাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেমি তখনকার মত বিদেয় নিলো। আমাদের ক্রুজের নাম “এসাডরা”। ঢাকা-বরিশাল যাতায়াতকারী লঞ্চের মতই এর সাইজ তবে অন্দর সজ্জা এবং আধুনিকায়নে সম্পূর্ণ ফাইভ স্টার হোটেলের মত। এর লবি, বার, সুইমিং পুল, সান-ডেক এবং রুম গুলো অত্যন্ত পরিপাটি। মন ভালো হবার পরিবর্তে একটু খারাপ হল দেশের কথা মনে করে। নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশে এমন একটা ক্রুজ চালান খুব কি কঠিন? সদরঘাট থেকে কুয়াকাটা পর্জন্ত এমন একটা ক্রুজে হলে কত মানুষ ঢাকা শহরের হাঁপিয়ে ওঠা জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বেড়াতে পারত খানিকটা সময়ের জন্য। অন্য রকম একটা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা হতো সবার।
দুপুরে খাবার খেয়ে লবিতে অপেক্ষা করছি পরবর্তী গন্তব্যের জন্য। বিকেলে আরেকটা মোটর চালিত নৌকা করে ঘুরে বেড়ালাম লেক নাসেরে, দেখলাম “এলিফেন্ট আইল্যান্ড” এবং “কিচনার আইল্যান্ড”। এলিফেন্ট আইল্যান্ড হল “নুবিয়ান” সম্প্রদায়ের একটি দ্বীপ। এখনো সুদানী বংশভূত এই আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব প্রাচীন ঐতিজ্য কে ধরে রেখেছে তাদের জীবন ধারায়। এমন অনেক নুবিয়ান সম্প্রদায়ের গুচ্ছগ্রাম মিশরের বিভিন্ন জায়গাতে পর্জটন-কেন্দ্র হিসেবে ছড়িয়ে আছে। এখানে জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে যে ১৯৮১ সালে নিহত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট “আনোয়ার সাদাত” ছিলেন নুবিয়ান বংশভূত একজন মিশরিও। “কিচনার আইল্যান্ড” হল শত রকমের পাখ-পাখালি তে পরিপূর্ণ অপরূপ একটি দ্বীপ। এই আসওয়ানে ব্রিটিশ শাসক “লর্ড কিচনার” ১৮৯০ সালে ৬ হেক্টর জায়গা নিয়ে এটি তৈরি করেন তাই তার নাম অনুসারে এই দ্বিপের নাম রাখা হয়েছে। প্রকৃতির এই অসীম সৌন্দর্জ্যে দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। অনেকবার মানস ভ্রমণে মিশর ঘুরেছি আজ দিব্য দৃষ্টিতে দেখে গেলাম প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্জ্যকে। দুই পারে কালের সাক্ষী হয়ে পুরনো মসজিদ, মন্দির ,বাড়ী, সারি সারি দারিয়ে আছে। মাঝে মাঝে সাদা বক আর কাল বক উড়ে যাচ্ছে ঝাঁক বেঁধে। প্রত্যেকের হাতে যা ছিল ক্যেমেরা, আইপ্যাড সারাক্ষণ চলছে, যেন এক টুকরো আসওয়ান সাথে নেবার পায়তারা। প্রাকৃতিক সৌন্দযে আমরা যখন বিমূঢ় তখন আমাদের জ্যোতির্ময় দাদা কবিতা লেখায় মশগুল। এ জীবনের সব আবেগ ও প্রতিভা ঢেলে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন মিশরকে নিয়ে। কিন্তু ক্ষুদে সদস্যদের অতি আগ্রহে (যন্ত্রণায়) লেখা বেশিদূর এগোতে পারে না। জ্যোতিদার পুরো নাম জ্যোতির্ময় হলেও বাচ্চারা তাকে ময়দা আঙ্কেল ডেকে দারুন আনন্দ পেত। পুরো ভ্রমণে জ্যোতিদা বাচ্চাদের আজব সব প্রশ্নের ততোধিক আজব সব উত্তর দিয়ে তাদেরকে মাতিয়ে রাখতেন। আনন্দপূর্ণ ও মজার স্মৃতি গুলো নিয়ে নৌবিহার শেষে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম লঞ্চে।
রাতে খেয়ে আমাদের গাইডের সাথে বেরিয়ে পরলাম আসওয়ানের বাজার গুলো ঘুরে দেখতে। বাজার কে এখানে “সুক” বলে। দোকানে গুলোতে টুরিস্টদের ওরা এখানকার একটি মজার পানীয় “হাইবিস্কাস জুস” খাইয়ে আমন্ত্রণ জানায় । এটি হল জবা ফুলের রস। প্রায় প্রতিটি বাজারে বিভিন্ন দোকান এরা জবা ফুলের পাপড়ি, গোলাপ ফুলের পাপড়ি বিক্রি করে। বাজার গুলোতে আফ্রিকার নানান দেশের নানান রকমের মুখোস, পিরামিড, তুতেন খামেনের ও নেফারতিতির মূর্তি, বাদ্য যন্ত্র ,হুক্কা পাওয়া যায় সুভেনির হিসেবে। কিছু কিনতে গেলে একেবারে নির্লজ্জের মত দামাদামি করতে হয় প্রতিটি দোকানে। টুরিস্টদের ঠকাতে এদের জুরি নেই। মোটামুটি কিছু সৌখিণ জিনিস কিনে ফিরে এলাম ক্রুজে।
রাতে আমাদের ক্রুজ আসওয়ান ছেড়ে “এডফু” নামক আরেকটি বন্দর শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গে দেখি নিঃশব্দ গতিতে এগিয়ে চলছে পরবর্তি গন্তব্যে। রেখে গেলাম প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার দূর থেকে আসা বাংলাদেশের এগারো জনের পদচিহ্ন আর সাথে নিয়ে গেলাম অসাধারণ কিছু ভাল লাগা স্মৃতি।
Pic: Temple of Isis in philae island
The writer is a practicing Psychiatrist, she
lives in Dhaka, Bangladesh with her family.
Photograph courtesy: Writer
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment