'The Cloud Book - write your story' is the virtual journal where people from all corners of this world are invited to write their 'never expressed' thoughts. We should bring all those thoughts to sunlight. They shall be written in this book of clouds.....and they shall live their lives. The Cloud Book - write your story - is the REFUGE where all those 'Never writtens' flock.... because they believe - one day they will surely get their wings to fly along with the clouds
Monday, April 28, 2014
Beautiful Kunming by Nafia Farzana
চির বসন্তের শহর কুমিং
Picture 1. Stone Forest - Kunming, China
Picture 2. Lake Dianchi - Kunming, China
বেইজিং ভ্রমণের শেষ দিন আমাদের ট্যুর অপারেটর “জেন” এল হোটেলে আমাদের সাথে দেখা করতে। খুবই অমায়িক একটি মেয়ে, সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে আছে । কিছুদিন হল সে ইংরেজি ভাষা শিখছে তাই পুরোটা তখনো রপ্ত করে উঠতে পারেনি বেচারী। আপ্রান চেষ্টা করতো আমাদের ইংরেজি বোঝার। “জেন” এলেই আমাদের মাঝে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত কে কি পদ্বতিতে তার সাথে কথা বলবো এবং যেকোনো বিষয় কিভাবে তার বোধগম্য করে তুলব। আমাদের দলের “উত্তম” মাইমিং এ রীতিমত পার্থ প্রতিম কে ছাড়িয়ে যেত আর ছবি আঁকায় আমার স্বামীবর তো “উন্মাদ” পত্রিকার কারটুনিস্ট কে ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম হত। যাই হোক সম্মিলিত প্রতিভায় ইংরেজি ভাষাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সেদিন আমরা “জেন” কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমরা আমাদের বেইজিং এর গাইড “রক” সাহেব এর মত নিরেট ধরনের কোন গাইড কুমিং এ চাই না। সে আমাদের কথা দিল কুমিং এর গাইড একজন মহিলা এবং সে ইংরেজি তে দক্ষ। তার নাম “ডং”। নাম শুনে একটু কেঁপে উঠেছিলাম তবুও আশা ছাড়িনি।
প্লেনে করে বেইজিং থেকে কুমিং এ যেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কুমিং বিমান বন্দরে নেমেই “মিস ডং” এর সাথে দেখা। ছোটখাটো চশমা পরা tom boy type এর মেয়েটি ইংরেজিতে বেশ ভালো এবং চটপটে। গাড়ীতে উঠে ওকে আমরা বারবার “ডং” ডেকে ডেকে ওর নামের শ্রাদ্ধ্ব্য করে ফেলেছিলাম। ও বুঝতে পেরে জানালো ওর একটা ইংরেজি নাম আছে সেটা হল “ভিভিয়ান”। জিভেরও যে একটা সুখ আছে “ভিভিয়ান” ডেকে টের পেলাম।
পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে তৈরি হব কুমিং দেখবো, তাই গেলাম ডাইনিং হলের দিকে। এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত ঘুরে শেষ, মনের মত খাবার পেলাম না। সবই হয় পুরা কাঁচা নাহয় আধা কাঁচা। একমাত্র রান্না করা মনে হল নুডুলস আর ডিম সেদ্ধকে তাই দিয়ে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম “ভিভিয়ানের” সাথে। সেদিন আবহাওয়া ছিল চমৎকার মানে ঘুরে বেরানোর জন্য দারুন। এখানকার আবহাওয়া কখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়না, সারা বছর জুড়ে রয়েছে একটি বসন্তের আমেজ। পর্ণরাজি এখানে শ্যামল , সজীব এবং ফুলে ফলে ভরা। তাই কুমিং শহরকে চির বসন্তের শহর বলা হয় । প্রকৃতির এই মোহনীয় আমেজ বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের এই শহরে ঘুরে বেড়াতে আকর্ষণ করে।
প্রথম আমরা গেলাম UNESCO world heritage তালিকা ভুক্ত চারশো বর্গফুট জায়গা জুরে অবস্থিত “stone forest” দেখতে। মেইন গেট থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ীতে করে যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ মিনিট। ২৭০ মিলিয়ন বছর আগে এই জায়গাটিতে সাগর ছিল । প্রাকৃতিক উপায়ে lime stone উঁচু হয়ে এই “stone forest” তৈরি হয়েছে। বিশাল পাথর গুলো নানা রকমের আকৃতি ধারন করে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো দেখলে ঈগল পাখি, কখনো হাতি, কখনো কচ্ছপ বলে মনে হচ্ছিল এগুলো কে। সেই অনুসারে চীনারা পাথর গুলোর নানা নাম দিয়ে তার সাথে নানা উপকথা জুড়ে দিয়েছে। চীনা উপকথায় আছে “আশিমা” নামের এক “Yi” গোত্রের মেয়েকে এক দুষ্টু দেবতা ধরে নিয়ে যায়, সেই মেয়েটি কষ্টে শোকে পাথর হয়ে তৈরি হয় এই পাথর গুলি। প্রতি বছর জুন মাসে তাই “Yi” গোত্রের লোকজন এখানে সেই উপকথাকে স্মরণ করে বাতি জ্বালিয়ে উৎসব পালন করে। এই “stone forest” অবশ্যই একজন গাইড অথবা ম্যাপ নিয়ে যাওয়া উচিৎ তা না হলে এই ভুলভুলাইয়াতে হারিয়ে যাবার ভয় আছে। নানা জায়গাতে ফোনবুথ বসানো আছে হারিয়ে গেলে অফিসে ফোন করে সাহায্য নিয়ে বের হয়ে আসার জন্য। এই দেশে এই ফোন বুথ চীনাদের জন্যই ঠিক আছে আমাদের মত যাদেরকে প্রতিদিন এঁকে ও মুকাভিনয় করে প্রয়োজন মেটাতে হয় তাদের ফোনবুথের সাহস না করাই ভালো। stone forest এ ঢুকেই আমাদের দলের সবচেয়ে ক্ষুদে সদস্য “অয়ন” মরিয়া হয়ে উঠলো হারিয়ে যাবার জন্য। বেচারা মায়ের দস্যি ছেলের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আধমরা অবস্থা। ঘুরে ফেরার পথে ভিভিয়ান আমাদের দারুন চাইনিজ খাবার খাওয়ালো । ভ্রমণের অর্ধেক আনন্দ নতুন খাবার আস্বাদনে । এরা সবুজ চায়ের দারুন ভক্ত । খাবার আগে পরে নানা ভাবে এই চা পান করে থাকে। পানি খায়না বললেই চলে।
খেয়ে দেয়ে ছুটলাম “দিয়াঞ্চি” লেকের পাশে অবস্থিত western hill দেখতে। চীনা উপকথায় আছে হাজার বছর আগে এক তরুণী এখানে তার চুল গুলো ছড়িয়ে শুয়ে শুয়ে তার প্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল, তার অশ্রুজলেই তৈরি হয়েছে এই “দিয়াঞ্চি” লেকটি আর তাই পাহাড়ের আরেকটি নাম হল “sleeping beauty hill”। এতে ওঠার উপায় দুইটি, একটি হল পদযুগল দ্বারা আরেকটি cable car করে । সিদ্ধান্ত হল ক্লান্ত পদযুগলকে টেনে ২৫০০ ফুট ওঠার চেয়ে cable car স্রেয় এবং আনন্দময়। পাখির চোখে দিয়াঞ্চি লেকটিকে দেখার একটা অপূর্ব সুযোগ পেয়ে গেলাম এই cable car এ চড়ে, সাথে পাহাড়ের গায়ে বসে থাকা ক্যামেরাম্যান দিয়াঞ্চি লেক আর western hill প্টভুমিতে দারুন একটা ছবি তুলে দিল আমাদের। এই পাহাড়ের মূল আকর্ষণ হল “তাও” ধর্মাবলম্বী ভিক্ষুদের তৈরি সতেরোশ শতাব্দীর কিছু অসাধারণ কারুকাজ করা মন্দির,মূর্তি এবং গুহা। নিপুন দক্ষতায় তৈরি এই পুরাকীর্তি প্রমান করে মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। ভিভিয়ান এই পুরাকীর্তির সাথে জুড়ে থাকা গল্পগুলো আমাদের বলছিল আর মূর্তি গুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল । ধীরে ধীরে খাড়াই ছেড়ে আমরা নীচে নেমে আসছিলাম আর পা গুলো জানিয়ে দিচ্ছিল তাদের অনেক বয়স হয়েছে তাই বিস্রাম জরুরী। আমরা সবাই মোটামুটি ভিভিয়ানের সাথে ইংরেজিতে কথা বলছি তাই আমাদের অয়ন বাবু কেন পিছিয়ে থাকবে । ক্ষুদ্র প্রানে দারুন উৎসাহে প্রায় প্রতি ১০ মিনিট অন্তর অন্তর বলে চলেছে “Vivian Vivian you like English, I like English”। অয়নের কথা গুলো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে ফিরে ফিরে আসছিল আর আমরাও এর মধ্যে চলে এলাম আমাদের গাড়ির কাছে। হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে পেটটা আমিষ খুঁজছিল । হোটেলের কাছে একটি ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম দোকান থেকে চিকেন ফ্রাইড রাইস খেয়ে প্রাণটা জুরিয়ে গেল।
আমাদের প্লেন পরের দিন দুপুরে ছাড়বে। ভিভিয়ান ভোরবেলা বিমান বন্দরে যাবার আগে আমাদের নিয়ে গেল “Grand View Park” এ। সার্থক এর নাম করণ। মনোরম পরিবেশে এর একদিকে পদ্ম পুকুর অন্যদিকে দূরে দেখা যাচ্ছে আগের দিনের দেখা western hill ও দিয়াঞ্চি লেকটি। এই পার্কটি বিখ্যাত এর ভেতরে অবস্থিত শত বর্ষ পুরানো Grand Tower টির জন্য। এই টাওয়ারটিতে বসে এর চারপাশের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করে বিভিন্ন সময়ে বহুসংখ্যক কবি বহু সাহিত্য রচনা করেছেন। তার মাঝে একটি স্তম্ভে কবি “সান রেনেং” এর লেখা একটি শ্লোক কে চীনা সাহিত্যে সবচেয়ে দীর্ঘ শ্লোক মনে করা হয়।
“Grand View Park” দেখে ছুটলাম বিমান বন্দরের দিকে । কিছুক্ষন ভিভিয়ান আমাদের সাথে থেকে পরবর্তীতে আরো সময় নিয়ে বেড়াতে যাবার আহবান জানিয়ে বিদায় নিল। আমি ধন্যবাদ দেই এই গাইডদের কথার জাদু দিয়ে নিজের দেশের আচার, ঐতিহ্য, উপকথার সাথে কত সাবলীল ভাষায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমাদের কে মোহিত করে রাখে। কিছুদিন দেশের বাইরে থাকলে দেশের প্রতি একটা টান অনুভব করা যায় আর তাই প্লেনে উঠেই ঘরে ফিরে আসার জন্য মনটা উদগ্রিব হয়ে গেলো।
Nafia Farzana is a practicing psychiatrist, who works and lives in Dhaka, Bangladesh.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment